“এক আকাশ মেঘ এক পশলা বৃষ্টি” বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া
পঁচিশে মার্চ ১৯৭১। বীভৎস সে কালাে রাত্রির কথা কার না হৃদয়ে তােলপাড় করে! ভােলা কি যায় সে তাণ্ডবলীলার ভয়াল চিত্র? নাকি কতক তার মুছে ফেলা যায় স্মৃতির পট থেকে? নটি মাস জুড়ে যুদ্ধের যে বিভীষিকা জীবন থেকে জীবনকে দলে দলে গেছে তার কতখানিই আর জানা! কত কাহিনীর জট যে কুণ্ডলি পাকিয়েছে তার কি কোনাে ইয়ত্তা আছে? নাকি তার সবটুকু আমাদের জানা? কত কাহিনীই তাে অতলে রয়েছে পড়ে, লােকচক্ষুর আড়ালে। সে কাহিনীর আখ্যানভাগে কি নারী, কি পুরুষ কিবা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কেউ কি পড়ে বাদ?
‘এক আকাশ মেঘ এক পশলা বৃষ্টি’-তে এনায়েত রসুল তেমনই এক আখ্যানভাগের আঁকিবুকি এঁকেছেন পিয়াল আর তৃণাকে ঘিরে সাথে জড়িয়ে থাকে ঊর্মি, মৃণাল সেনসহ আরাে অনেকে।
ঘটনার সূত্রপাত পিয়াল যখন মেডিকেলে পড়াকালীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তখন থেকে। ন’মাস যুদ্ধ চলাকালীন ধর-পাকড় আর রাজাকারের হাতে বন্দি হয়ে নির্যাতন ভােগ নিত্য ব্যাপারে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে যােগদানের পর ঘটনাচক্রে পিয়ালকেও বন্দি হতে হয় রাজাকারদের হাতে। তারপর ভাগ্যক্রমে সে বন্দিদশা থেকে পালিয়ে মুক্তিও মেলে তার। আশ্রয় জোটে তৃণাদের ঘরে। তৃণার বাবা মৃণাল সেন একজন স্কুল শিক্ষক। মুক্তিযােদ্ধাকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে শেষে তাকেও প্রাণ হারাতে হয়। সে রাতে পিয়াল আর তৃণা গ্রামের অন্য পড়শির বাড়িতে থাকায় মিলিটারিদের হাত থেকে বেঁচে যায়। শেষমেশ তৃণাও যুদ্ধে যােগদান করে। এটুকু যুদ্ধকালীন ঘটনাক্রম, কিন্তু যুদ্ধোত্তোর জীবনে এসে তৃণা যখন অসহায় হয়ে পড়ে তখন পিয়াল তার সে অভাব ঘােচায় তাকে বিয়ে করে। মুসলিম-হিন্দু কোনাে ইজম তাদের এক হতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু বিবাহিত জীবনে এসে একটি সন্তানের জন্য যে মনঃপীড়া তৃণার মনকে পলে পলে কাদায় তার দায়ভার কে বহন করবে? পিয়াল নাকি তৃণা? সে কাহিনীর জট খুলতেই এনায়েত রসুল ছিলেন বদ্ধপরিকর। আর তাতেই ভরে উঠেছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।
সমাপ্তি এখানেই নয়, এর পরেও অনেক কিছুই থাকে অধরা, শুধু পাঠক এটুকু জানবেন, সাদা পাতায় যে অক্ষরের পর অক্ষর এসে নিয়েছে ঠাই তার রেশ সুদূর পরাহত। কি আমি, কি আপনি?