ভূমিকা
‘বিশ্বসাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি অনন্য নাম। ম্যাথু আর্নন্ড তাঁর সনেটে শেকসপিয়রকে যে লোকোত্তর পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, সেই প্রায় অলৌকিক মহিমা বিভূতিভূষণেও বর্তমান। সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি নিঃসঙ্গ এবং অননুসৃতও বটে। প্রখ্যাত পূর্বসুরীদের অনুসরণ করা প্রায় সর্বযুগের কিছু লেখকের প্রিয় অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। বিভূতিভূষণকে কিন্তু কেউ সেভাবে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তাঁর আদলে গদ্য রচনার চেষ্টা করেননি। এর সবচেয়ে বড় কারণ বোধহয় এই যে, তাঁকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা যায় না। বাতাসের মতো, সূর্যের আলোর মতো, আকাশের নিচে পড়ে থাকা শান্ত গ্রাম্য নদীটির মতো সহজকে কি এত অনায়াসে প্রকাশ করা যায়? সুকুমার সেন মশাই সাহিত্য পরিষদে বিভূতিভূষণের জন্মদিন উপলক্ষে প্রদত্ত একটি স্মারক বক্তৃতায় এই স্নিগ্ধতা এবং স্বচ্ছ উপলব্ধিকেই লেখকের রচনার প্রধান গুণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। যখন তিনি বড়দের জন্য কলম ধরেছেন, তখনও এই গুণই তাঁকে দেশ ও কালের অতীত শাশ্বত ভূমিতে পৌছাতে সহায়তা করেছে।
বড়দের জন্য তিনি লিখেচেন অবলীলায়। এ যেন চিরজীবী বনদেবতা, যার চোখে অনিবার্ণ বিস্ময়, হাতে প্রকৃতির অন্তরাত্মার সুরে বাঁধা বাঁশি। সে বাঁশি বাজিয়েছেন তিনি সুনিপুন দক্ষতায়।
‘অথৈ জল’ ও ‘জলে পাহাড়ে’ দুটি উপন্যাস নিয়ে ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ নামের এই সংকলন সংকলিত হলো। বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য সংকলনটি আমাদের সকল শ্রেণীর পাঠকের ভালো লাগবে, এ বিশ্বাস আপনাদের মতো আমারও।
মশিউর রহমান
১ জানুয়ারি ২০১৩