খাওয়ার পরে দোহারির পেট গুরগুর করে ডাকে। এরপরেই বেদনা শুরু হয়। তখন মনে হয় কুড়ুয়া পাখি তার পেটের ভিতরে সরু নলি ঢুকিয়ে দিয়ে এধারওধার টানে। ডাক্তার তখন দোহারির পেট পরীক্ষা করে বলেছিলেন, নিয়মিত না খাওয়ার কারণে তার শরীরের এই অবস্থা। এরপর তার পেটের চামড়া টিপে তিনি আরাে বলেছিলেন, এখন থেকে নিয়মিত ডিম-দুধ-ফলফলারি খেতে পারলে কয়েকদিনেই তার ঢিলে-ঢালা চামড়ার ভিতরে মাংস তৈরি হবে। তাই তরকারি বেচে ফল খাবে বলে জল্লার ওপর মাটির থােম্বা বসিয়ে বড়াে যত্নে দোহারি সেখানে লাউয়ের আবাদ করে যাচ্ছে। খােলা জায়গায় খােলামেলা হাওয়া। এর সাথে সূর্যের সােনালি আলাে এসে সাঁতার কাটে জাংলায়। তাতেই লাউ গাছের ফুল আহলাদী তরতাজা।
নিচে জলের সাথে বিঘতখানিক দূরত্ব রেখে জলছোঁয়া ছায়া পাচ্ছে অসংখ্য লাউ। জাংলা ভাঙে ভাঙে এমন লাউ ধরেছে গাছে ।। আনন্দে আর গর্বে দোহারি তার দুর্বল হাতের পাঞ্জা মেলে ধরে বললাে, ভিখারির লক্ষ্মী যেমুন পায়ে, গৃহস্থের লক্ষ্মী তেমুন হাতে। তার পাড়াতাে মুরুব্বি মিয়াসাব এতে সায় দিয়ে বলে, সত্যি দোহারির হাতের গড়া সবজিবাগান কথা কয়। এরপর জাংলা থেকে এক টুকরাে কচি লাউডগা ভেঙে নিজের মাথায় চুঁইয়ে বলে, আমার মাথায় যত্ত চুল তর কদু গাছে তত্ত কদু ধরুক রে বেড়া। আমি খুশি অইয়া এই কতা কইয়া গেলাম । মিয়াসাবের ডাক্তারি বিদ্যাটা প্রথম টের পেয়েছিল দোহারিই। সে বাড়িতে পৌছবার আগেই খবর হয়ে যায়। তখন দোহারি ফিরে এসে দেখে, জাংলার মধ্যে লাউয়ের ডগার স্নেহের বাঁধন শিথিল হয়ে গেছে । খােলা ছাতা সবুজ পাতারা নেতিয়ে পড়েছে। সমস্ত লাউ একে একে শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে জলে ডুবেছে।